শ্রীনগরে চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেটের হোতা বিদ্যুৎ এখন ‘ডিবি” !

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি | টিভি টুডে 

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে তাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ নামে এক ব্যক্তি ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় মানুষদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একসময় তিনি চোরাই মোটরসাইকেল সিন্ডিকেট চালাতেন, এখন নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

বিদ্যুৎ-এর বিরুদ্ধে শুধু চাঁদাবাজিই নয়, রয়েছে জাল কাগজপত্র বানানো, নারী নির্যাতন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার, ব্ল্যাকমেইল, এমনকি মাদকের ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগও।

মোটরসাইকেল সিন্ডিকেট থেকে শুরু

স্থানীয়রা জানান, আগে মাওয়া ফেরিঘাট দিয়ে বেনাপোল থেকে চোরাই মোটরসাইকেল ঢাকায় আসত। সেসময় বিদ্যুৎ ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই পথ সহজ হলেও, পুলিশের নজরদারির কারণে সেই সিন্ডিকেট ভেঙে পড়ে। এরপর থেকেই বিদ্যুৎ নিজেকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লোক পরিচয় দিয়ে এলাকায় নানা অপরাধে যুক্ত হন।

ভিডিও ভাইরাল, চাঁদাবাজির অভিযোগ

রমজান মাসে শ্রীনগর বাজারে রাতে ময়লা ফেলার একটি বিষয় নিয়ে কিছু দিনমজুরকে হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করেন বিদ্যুৎ। সেই ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে ‘ডিবি’ পরিচয় দিতে দেখা যায়।

একইভাবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সামির নামের এক যুবককে ফোন করে মাওয়া থেকে ডেকে এনে একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে বিকাশে ৩০ হাজার টাকা ও একটি আইফোন আদায় করে তাকে ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে ছেড়ে দেন। সেই মোটরসাইকেলটি পরে বিক্রি করে দেন এক কিশোরকে।

দুর্ভাগ্যক্রমে সেই কিশোর সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে বিদ্যুৎ হাসপাতালে গিয়ে তার পরিবার থেকে ফের টাকা দাবি করেন। সালিশের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা আদায় করেন এবং মোটরসাইকেলটিও ফেরত নিয়ে নেন।

জালিয়াতি ও ভয়ভীতি

‘তোহা প্লাজা’ নামের দোকান থেকে বিদ্যুৎ নকল জমির দলিল, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, সার্টিফিকেটসহ নানা কাগজপত্র বানান বলে অভিযোগ রয়েছে। দোকানটি ঘিরে গত ছয় মাসে একাধিক ঝামেলা হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

ঈদের দিন ১২ পিস ইয়াবা বিক্রির সময় দুই ক্রেতাকে মারধর করে তাদের কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা ও স্বর্ণের আংটি নিয়ে পালিয়ে যান বলেও অভিযোগ।

পরিবারেও সহিংসতা

বিদ্যুৎ-এর স্ত্রী শোভা জানান, তাদের দুই সন্তান। সংসারে শান্তি নেই। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমাদের ভরণপোষণ দেয় না। প্রায়ই মারধর করে। সন্তানদের কথা ভেবে সব সহ্য করছি।”

ব্ল্যাকমেইলে প্রবাসীর সর্বনাশ

কাতারপ্রবাসী এক ব্যক্তির মেয়ের ব্যক্তিগত ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে বিদ্যুৎ ৭০ হাজার টাকা আদায় করেন। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সেই প্রবাসী দু’চোখের দৃষ্টিও হারান বলে পরিবার জানায়।

শ্রীনগর থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলেন, “বিদ্যুৎ-এর বিরুদ্ধে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিক ও প্রতিবেশীদের মত

মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি বাসির উদ্দিন জুয়েল বলেন, “তাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ কোনো সাংবাদিক নন। সে ভূয়া পরিচয়ে সাংবাদিকদের ছবি বিকৃত করে অপপ্রচার চালায়।”

শ্রীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, “থানার গেটের সামনেই সে চাঁদাবাজি করছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি আরও ভয়াবহ হবে।” বিদ্যুৎ-এর চাচা খোকন শেখ বলেন, “ওর কারণে আমরা পৈতৃক ভিটা ছেড়ে নতুন জায়গায় বাড়ি করেছি। এখন আমরা তার কোনো দায়িত্ব নিতে চাই না।” স্থানীয়রা বলছেন, এভাবে একের পর এক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অথচ কেউ মুখ খুলছে না ভয়ে। তারা চান, বিদ্যুৎ-এর বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

Hot this week

spot_img

Related Articles

spot_imgspot_img