টিভি টুডে ডেস্ক | ২৬ জুন ২০২৫
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। তিনি কোনো বিবৃতি দেননি, টেলিভিশনে দেখা যাননি, এমনকি তার স্বাস্থ্য বা অবস্থান নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। এ নিয়ে দেশটির সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও কূটনীতিকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
‘তিনি কোথায়?’
মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক উপস্থাপক সরাসরি খামেনির দপ্তরের এক কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, “সর্বোচ্চ নেতাকে নিয়ে জনগণ খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি কেমন আছেন, তা কি আমাদের জানাতে পারেন?” কিন্তু আয়াতুল্লাহ খামেনির আর্কাইভ দপ্তরের প্রধান মেহেদি ফাজায়েলি প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেন, “আমাদের সবারই তার জন্য দোয়া করা উচিত।” তিনি আরও জানান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং সর্বোচ্চ নেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধ, হামলা ও খামেনির নীরবতা
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। পরে কাতারের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় তেহরান। কিন্তু এই পুরো সংকটকালীন সময়ে আয়াতুল্লাহ খামেনিকে একবারও জনসমক্ষে দেখা যায়নি। কোনো টেলিভিশন বিবৃতি, রেকর্ডকৃত বক্তব্য, এমনকি ছবি—কিছুই প্রকাশ পায়নি।
বাংকারে ? নাকি অন্য কিছু ?
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামেনিকে হত্যা করার চেষ্টার আশঙ্কায় তাকে একটি নিরাপদ বাংকারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং সব ধরনের ইলেকট্রনিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, তিনি কি সুস্থ আছেন? তিনি কি এখনও দেশ পরিচালনায় সক্রিয়? কেউ কেউ এমনকি তার জীবিত থাকার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
জল্পনা-কল্পনা ও গুজব
‘খানেমান’ নামের একটি রিয়েল এস্টেট দৈনিকের সম্পাদক মোহসেন খলিফেহ বলেন, “এই অনুপস্থিতি আমাদের মতো অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীকেই চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি খামেনি প্রয়াত হয়ে থাকেন, তবে তার জানাজা হবে ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ঘটনা।” সোশ্যাল মিডিয়াতেও খামেনিকে নিয়ে নানা গুজব, আশঙ্কা ও জল্পনা ছড়িয়ে পড়ছে। তার অনুসারীরা বলছেন, তাকে না দেখে বা না শুনে তারা যুদ্ধের বিজয়কে পূর্ণ মনে করতে পারছেন না।
নতুন নেতৃত্বের ইঙ্গিত?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ সরকারের অনেকেই এখন বাস্তববাদী পথে হাঁটার কথা বলছেন। পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, “এখন সময় এসেছে শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার। যুদ্ধ এবং জনগণের আত্মত্যাগ আমাদের নতুনভাবে ভাবতে শেখাচ্ছে।”
অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব?
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র বলছে, খামেনির অনুপস্থিতির মধ্যে সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত ও ক্ষমতার প্রতিযোগিতা বাড়ছে। কেউ চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা, কেউ আবার আরও কড়া অবস্থান নিতে বলছেন।
ধর্মীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন…
বিশিষ্ট পর্যবেক্ষক ও চ্যাথাম হাউসের গবেষক সানাম ভাকিল বলেন, “আশুরার সময় খামেনিকে জনসমক্ষে দেখা না গেলে তা হবে এক অশুভ সংকেত। তাকে সামনে আসতেই হবে।” ইরানে শিয়া মুসলমানদের জন্য আশুরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিন, যা জুলাইয়ের শুরুতে পালিত হবে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি
ইসরায়েলের হামলায় ইরানে ৬০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। সরকার যুদ্ধবিরতি ও জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। রাজধানী তেহরানে কনসার্ট ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে দেশবাসীকে উজ্জীবিত রাখার চেষ্টা করছে প্রশাসন।
কিন্তু আয়াতুল্লাহ খামেনির নীরবতা এই মুহূর্তে দেশজুড়ে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে: তিনি কোথায়?
📌 টিভি টুডে | আরও তথ্য পেলে আমরা হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করবো। যদি আপনার কাছে নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকে, তাহলে সোর্সসহ আমাদের অনুসন্ধানী টিমকে জানান।