শ্রমিক ও নিরাপত্তাকর্মীদের বেঁধে রেখে গুদাম থেকে ১৫ টন অ্যালুমিনিয়াম বার, তামার তার ও বৈদ্যুতিক তার নিয়ে গেছে ডাকাতদল
বাগেরহাট, প্রতিনিধি– বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় অবস্থিত হ্যামকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের আওতাধীন ‘এনজিন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ’-এ এক ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত শুক্রবার, ৪ জুলাই রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল কারখানার কর্মচারীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে রেখে প্রায় এক কোটি দুই লাখ টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এই দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি মুখোশধারী ডাকাতদল অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কারখানায় প্রবেশ করে। প্রথমে তারা কারখানার নিরাপত্তা প্রহরীকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাবু করে। এরপর একে একে ৭ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৪ জন শ্রমিককে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। কর্মচারীদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ডাকাতরা সরাসরি কারখানার গুদামে প্রবেশ করে।
গুদাম থেকে তারা ১৫ টন অ্যালুমিনিয়াম বার, ১ টন তামার তার, এবং ২.৫ টন বৈদ্যুতিক তার দুটি ট্রাকে বোঝাই করে। এই কাঁচামালগুলো প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনের জন্য সংরক্ষিত ছিল। হ্যামকো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, লুণ্ঠিত এই সামগ্রীর আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ২ লাখ টাকা। ডাকাতদল প্রায় আট ঘণ্টা ধরে কারখানায় অবস্থান করে এবং ভোর ৪টার দিকে মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।
হ্যামকো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মো. সিদ্দিকুর রহমান এই ঘটনায় গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “ডাকাতদল এত দীর্ঘ সময় ধরে কারখানায় অবস্থান করে নির্বিঘ্নে মালামাল লুট করে নিয়ে গেল, এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা দ্রুত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।” তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত এসব সামগ্রীর অভাবে তাদের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক মীর এই ডাকাতির খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. রবিউল ইসলাম শামীমসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ওসি মীর বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি যে ডাকাতদল নিরাপত্তাকর্মী ও শ্রমিকদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে।”
পুলিশ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে এবং জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু করেছে। ওসি আবদুর রাজ্জাক মীর আরও জানান, “কর্তৃপক্ষ যদি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে, তাহলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পুলিশ কি দ্রুত ডাকাতদের ধরতে পারবে এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে? ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন সবার নজর।