শেরপুরে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আরও এক হাতির মৃত্যু: ৪ মাসে প্রাণ গেল ৩ হাতির

খাবার খুঁজতে লোকালয়ে নেমে এসেছিল হাতিটি; বন বিভাগের উদ্বেগ, পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন

শেরপুর প্রতিনিধি: – শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী সীমান্তে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে আরও একটি বন্যহাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার, ৫ জুলাই সকালে বন বিভাগের মধুটিলা রেঞ্জের এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এই নিয়ে গত চার মাসেরও কম সময়ে এই এলাকায় তিনটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধার করা হলো, যা পরিবেশপ্রেমীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

যেভাবে ঘটল এই দুর্ঘটনা

খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ উদ্ধার করে। মধুটিলা রেঞ্জের রেঞ্জার দেওয়ান আলী জানিয়েছেন, খাবার খুঁজতে পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে এসেছিল হাতিটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি একটি বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে মারা যায়। হাতিটির শুঁড়ে পোড়া দাগ ছিল। হাতিটি ছিল একটি মাদি এবং এর বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ বছর। বন বিভাগ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।

কেন হাতিরা লোকালয়ে আসছে?

স্থানীয়রা বলছেন, মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় হাতির লোকালয়ে আসার ঘটনা এখন অনেক বেড়ে গেছে। পাহাড়ে পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় হাতির দল এখন শুধু ফসলের খেতেই নয়, মানুষের বাড়িঘরেও ঢুকে পড়ছে। এতে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও হাতিটির মরদেহ যেখানে পাওয়া গেছে, সেখানে সরাসরি বিদ্যুতের খুঁটি বা তার ছিল না, তবে কাছেই হাতিপাগাড় ক্যাম্পের আশেপাশে অনেক বাড়িঘর আছে যেখানে বিদ্যুতের সংযোগ রয়েছে।

বারবার হাতির মৃত্যু: আগের ঘটনাগুলো

মধুটিলা রেঞ্জ এলাকায় আগেও হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে:

  • গত ২০ মার্চ, ২০২৫ তারিখে পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামের লালনেংগড় এলাকায় বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে একটি হাতির মরদেহ পাওয়া যায়।
  • এরপর গত ২৯ মে, ২০২৫ তারিখে দাওধারা পাহাড় থেকে একটি সদ্যোজাত হাতিশাবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল।

এভাবে ঘন ঘন হাতির মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশ ও প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা মানুষেরা খুবই চিন্তিত। অধিকারকর্মী নিধারঞ্জন কোচ ফেসবুকে নিহত হাতির ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন, “আবারও বন্যহাতির মৃত্যু। এর শেষ কোথায়? হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব মেটাতে সরকারের উদ্যোগ কী? শুধু ক্ষতিপূরণ দিলেই কি যথেষ্ট? হাতি-মানুষের সহাবস্থানের পথ খুঁজতে খুঁজতে এশিয়ান হাতি বিলীন হয়ে যাবে!”

এই ঘটনাগুলো আমাদের বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ক্ষেত্রে যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলো আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। হাতি এবং মানুষের একসঙ্গে শান্তিতে বসবাসের জন্য একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা এখন খুবই জরুরি।

Hot this week

spot_img

Related Articles

spot_imgspot_img