তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জমা: ২০২৪ সালে প্রায় ৮৮০০ কোটি টাকা
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পুরনো পাচারকৃত অর্থ সুইস ব্যাংকে স্থানান্তরের সম্ভাবনা বেশি
https://youtu.be/Ki6H-VHoJhM?si=Vb4bLal9WTpjNc8h
টিভি টুডে ডেস্ক:
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের জমা অর্থ ২০২৪ সালে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (SNB) প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড’ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এই পরিমাণ অর্থ গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সাম্প্রতিক এই বৃদ্ধিকে ঘিরে প্রশ্ন উঠছে—এত বিপুল অর্থ কোথা থেকে গেল? কীভাবে এবং কোন উৎস থেকে এই অর্থ সুইস ব্যাংকে জমা হলো?
এক বছরে ৩৩ গুণ অর্থ বৃদ্ধি
২০২৩ সালে বাংলাদেশিদের সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থ ছিল মাত্র ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ, যা ২০২৪ সালে লাফিয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ফ্রাঁতে—অর্থাৎ ৩৩ গুণ বৃদ্ধি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ডেটার পেছনে থাকতে পারে পূর্বে ছড়িয়ে থাকা পাচারকৃত অর্থকে কেন্দ্রীভূত করে সুইস ব্যাংকে স্থানান্তর করার প্রবণতা।
অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ: কোথা থেকে যাচ্ছে এই অর্থ?
🧭 ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (সিপিডি):
“এই তথ্য পরিসংখ্যানগত না পদ্ধতিগত—তা বোঝা জরুরি। আগের বছরের তুলনায় যে বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, তা ট্রেডভিত্তিক মানিলন্ডারিংয়ের ফল হতে পারে। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানির ঘোষণা বিকৃত করে অর্থ পাচার। সরকার যদিও উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু সুইস ব্যাংক থেকে অর্থ ফেরত আনার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়।”
🧭 ড. সাইমা হক বিদিশা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়):
“সরকার যেহেতু বিদেশে ছড়িয়ে থাকা পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সচেষ্ট, তাই পাচারকারীরা হয়তো নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে সুইস ব্যাংকে অর্থ স্থানান্তর করছে।”
পাচারের গন্তব্য কেন সুইস ব্যাংক?
সুইস ব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই গোপনীয় লেনদেনের জন্য কুখ্যাত। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও ‘গোপন নিরাপদ গন্তব্য’ হিসেবেই এর গ্রহণযোগ্যতা পাচারকারীদের কাছে অটুট।
🧭 ড. আবু আহমেদ (অর্থনীতিবিদ):
“অনেকে দুবাই, কানাডা বা অন্যান্য দেশে রাখা অর্থ সরিয়ে সুইস ব্যাংকে নিয়েছেন। কারণ, অন্যান্য দেশে সরকারের নজরদারি বেড়েছে। সুইস ব্যাংকে এখনও তুলনামূলক নিরাপদ মনে করছেন তারা।”
রাজনৈতিক পটভূমি ও অভ্যুত্থানের প্রভাব
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন,
“আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অনেক সুবিধাভোগী বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হওয়ার শঙ্কায় অনেকেই অর্থ সরিয়ে সুইস ব্যাংকে নিয়েছেন।”
তাঁর মতে, সরকারের ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে তদন্ত ও নিষেধাজ্ঞা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘টাকা বাঁচানোর শেষ চেষ্টা’ হিসেবে এই স্থানান্তর ঘটেছে।
২০০৯–২০২৩: ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রকাশিত শ্বেতপত্র অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে। এই বিপুল অর্থের বড় অংশ গেছে ইউএই, ইউকে, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে।
বাণিজ্য-ভিত্তিক মানিলন্ডারিং: গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রতিবেদন
ওয়াশিংটনভিত্তিক জিএফআই’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় আমদানি-রপ্তানির নামে মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে। এই তথ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক সুইস ব্যাংক রিপোর্টে পাওয়া অর্থের অঙ্ক মিলিয়ে একটি সংঘবদ্ধ অর্থপাচার চক্রের কার্যক্রম স্পষ্ট হয়।
সুইস ব্যাংকে এখনো কেন অর্থ যায়?
- গোপনীয়তা ও জটিল আইনি কাঠামো
- রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সুরক্ষার খাতিরে অর্থ স্থানান্তর
- সরকারি নজরদারির আশঙ্কা থাকলে, অর্থ পাচারকারীরা ঝুঁকছে নিরাপদ বিকল্পে
উপসংহার: স্বচ্ছতা, নজরদারি ও তদন্তই প্রধান চাবিকাঠি
যখন সরকার পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার কথা বলছে, তখন সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ট্রেন্ড বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক-প্রশাসনিক জবাবদিহিতার সংকটকেই উন্মোচিত করে।
📡 TV TODAY – সত্য, অনুসন্ধান ও আস্থা একসাথে
বাংলাদেশের প্রথম প্রিমিয়াম পে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল। উপভোগ করুন HD ডকুমেন্টারি, প্রিমিয়াম কনটেন্ট, এক্সক্লুসিভ ইনফোটেইনমেন্ট, সর্বশেষ খবর আর আকর্ষণীয় বিনোদন—এক প্ল্যাটফর্মে।
🔔 TV TODAY–এর সঙ্গে থাকুন, সত্যকে জানুন এবং নতুন দৃষ্টিতে বিশ্বকে দেখুন।