টিভি টুডে রিপোর্ট
বাংলাদেশের প্রায় ৫৬ শতাংশ কৃষিজমি অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অর্থাৎ এসব জমি থেকে হেক্টরপ্রতি কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয়, দেশের মোট কৃষিজমির মধ্যে মাত্র ৪৪ শতাংশ টেকসই ও উৎপাদনক্ষম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ২০ শতাংশ জমিকে চাহিদানুযায়ী টেকসই হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। বাকি ৪৩ দশমিক ১৭ শতাংশ জমিকে ‘গ্রহণযোগ্য’ পর্যায়ের টেকসই বলা হয়েছে।
প্রথমবারের মতো ‘প্রোডাকটিভ অ্যান্ড সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার সার্ভে ২০২৫’ শিরোনামে বিবিএস এই জরিপটি পরিচালনা করে, যা ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মেয়াদে মাঠপর্যায়ে সম্পন্ন হয়। জরিপের মাধ্যমে দেশের কৃষিজমির অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও সামাজিক টেকসইতা নিরূপণের চেষ্টা করা হয়।
জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭২ দশমিক ৭৫ শতাংশ কৃষিজমি এমন পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যাদের ভাষ্য অনুযায়ী তাদের অন্তত অর্ধেক জমি মাটির ক্ষয়ের সমস্যায় ভুগছে। এটি কৃষিজমির উৎপাদনক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ খাদ্যনিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
তবে আশার বিষয়ও রয়েছে। জরিপে উঠে এসেছে, দেশের ৯৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ কৃষি পরিবার গত এক বছরে কোনো খাদ্যসংকট বা চরম খাদ্যহীনতার মুখোমুখি হয়নি। এছাড়া প্রায় ৮৯ শতাংশ কৃষক পরিবার তাদের জমির ওপর স্থায়ী মালিকানা ও নিরাপদ দখলাধিকারের সুবিধা উপভোগ করছে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৮২ শতাংশ কৃষিজমি সেচসুবিধার আওতায় রয়েছে। সার্বিকভাবে ২০২২ থেকে ২০২৪ সময়কালে দেশের প্রায় ৭৯ শতাংশ কৃষিজমি অন্তত এক বছর লাভজনক ছিল বলে জানায় বিবিএস।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম বলেন, দেশের কৃষিতে টেকসইতার মাত্রা এখনও অনেক জায়গায় উদ্বেগজনক। তবে এই জরিপে যেসব ঘাটতির দিকগুলো উঠে এসেছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সরকারি পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে কৃষি খাত আরও স্থিতিশীল ও উৎপাদনক্ষম হতে পারে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুবুল হক পাটওয়ারী বলেন, কিছু সূচকে বাংলাদেশ ভালো করছে, তবে সার ও কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় আরও জোরালো পদক্ষেপ জরুরি।
পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার বলেন, কৃষিকে শুধুই মুনাফাভিত্তিক না দেখে পরিবেশগত গুরুত্বও বিবেচনায় নিতে হবে।