চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ১৮৯ কোটি টাকায়। এই পরিমাণ তাদের বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩৫.৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষে এনবিএফআই খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, যেখানে খেলাপি ঋণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩.২৫ শতাংশ।
তিন মাসে ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১,৫৩৭ কোটি টাকা, কিন্তু খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২,১০০ কোটি টাকা, যা ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণের বৃদ্ধিকে আরও উদ্বেগজনক করে তোলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং (বকেয়া ঋণ) বৃদ্ধি পেয়েছে ২,৫৯৮ কোটি টাকা, অথচ একই সময়ে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি হয়েছে ৩,৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, নতুন বিতরণকৃত ঋণের সঙ্গে পূর্বের ঋণগুলোও দ্রুত খেলাপি তালিকায় যুক্ত হচ্ছে।
আইআইডিএফসি’র সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, “পুরনো ওভারডিউ ঋণগুলো এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে, নতুন ঋণ দেওয়া কম হওয়ায় নতুন ঋণ থেকে খেলাপি ঋণের হার হঠাৎ বাড়ার সম্ভাবনা কম।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তথ্যে দেখা গেছে, ৩৫টি এনবিএফআইয়ের মধ্যে ১৯টির খেলাপি ঋণের হার ৫০ শতাংশের বেশি। একই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এনবিএফআই খাতের সম্পদের গুণগত মান ও লাভজনকতা কমেছে।
২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তাদের মোট সম্পদ ১.২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৯,৪৯৩ কোটি টাকায়। আর বার্ষিক রিটার্ন অন অ্যাসেটস (ROA) ঋণাত্মক ৩.০২ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ঋণাত্মক ২.৪৪ শতাংশ।
এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিএফআই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “বিভিন্ন অনিয়ম ও সুনাম ক্ষুণ্ণতার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান ডিপোজিট সংগ্রহে ব্যর্থ হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদী পুনঃনির্ধারিত ঋণগুলো খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।”
গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া আরও জানান, “বর্তমানে এনবিএফআই খাত লিকুইডিটি সংকটে রয়েছে। আগের মতো নতুন ডিপোজিট পাওয়া যাচ্ছে না, এবং ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করায় ব্যাংকগুলোর তরল সম্পদ সহায়তাও কমে গেছে। তার ফলে তারল্য সংকটের কোনো সহজ সমাধান এখনও সম্ভব হয়নি।”